রবিবার ১৯ অক্টোবর ২০২৫ - ১৪:৫৬
মুহাজির ও আনসারদের ঘরের দরজায় ফাতিমা (সা.)-এর আহ্বান

ফাতিমা (সা.) প্রতিদিন কিংবা প্রতিরাতে তিনি দরজায় গিয়ে কড়া নাড়তেন। দরজার ওপার থেকে মানুষ নীরব থাকলেও তিনি তাঁর কণ্ঠে ন্যায় ও সত্যের আহ্বান জানাতেন।

হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী,

(শেখ মুফিদের বর্ণনা অনুযায়ী)

ইসলামের ইতিহাসে কিছু মুহূর্ত আছে, যা শুধু ইতিহাসের অংশ নয়—তা হৃদয়ের গভীরে অমোচনীয় দাগ হয়ে থাকে। এমনই এক বেদনাময় অথচ সত্যসন্ধানী অধ্যায় হলো, হযরত ফাতিমা যাহরা (সা.)-এর সেই ঐতিহাসিক আহ্বান—যখন তিনি নবীজির ইন্তেকালের পর মুসলিম সমাজের নীরবতা ও অবিচারের বিরুদ্ধে শেষবারের মতো যুক্তি ও সত্যের দাওয়াত নিয়ে মুহাজির ও আনসারদের ঘরে ঘরে গিয়েছিলেন।

প্রখ্যাত শিয়া আলেম শেখ মুফিদ (রহ.) তাঁর গ্রন্থ আল-ইখতিসাস (পৃষ্ঠা ১৮২)-এ এ ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছেন। তিনি বলেন, হযরত ফাতিমা (সা.) নিজে বাইরে বের হতেন এবং হযরত আলী (আ.)-কে একটি মাদী গাধার পিঠে বসিয়ে নিতেন—যাকে আরবরা “আল-আতান” বলে ডাকে। সেই প্রাণীর পিঠে ছিল একটি হালকা কাপড়, যা নরম, কিন্তু সাধারণ ও সরল।

শেখ মুফিদ বলেন,
 “فدار بها اربعين صباحاً فی بیوت المهاجرین و الانصار”
অর্থাৎ, তিনি চল্লিশ দিন ধরে মুহাজির ও আনসারদের ঘরে ঘরে গিয়েছিলেন।

প্রতিদিন কিংবা প্রতিরাতে তিনি দরজায় গিয়ে কড়া নাড়তেন। দরজার ওপার থেকে মানুষ নীরব থাকলেও তিনি তাঁর কণ্ঠে ন্যায় ও সত্যের আহ্বান জানাতেন:
 “یا معشر المهاجرین و الانصار! انصروا الله…”
অর্থাৎ, হে মুহাজির ও আনসারগণ! আল্লাহর সাহায্য করো—অর্থাৎ আল্লাহর বন্ধুর সাহায্য করো। আমি তোমাদের নবীর কন্যা ফাতিমা। তোমরা নবীর সঙ্গে বাইয়াত করেছিলে, তাঁর আহলে বাইতের সঙ্গে অঙ্গীকার করেছিলে। আজ নবীর কন্যার প্রতি কেন অবিচার করছো?”

এই আহ্বানে ছিল না কোনো রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা, ছিল কেবল সত্য প্রতিষ্ঠার আর্তি। কিন্তু ইতিহাস সাক্ষী—
মুহাজির ও আনসারদের কেউই তাঁর এই ডাকের জবাব দেননি।
কেউ এগিয়ে আসেননি, কেউ সহায়তা করেননি, কেউ তাঁর দুঃখ ভাগ করেননি।

হযরত ফাতিমা (সা.)-এর এই চল্লিশ দিনের দরজায় দরজায় আহ্বান ছিল ইসলামের ইতিহাসে সর্বশেষ নৈতিক জাগরণের আহ্বান—যেখানে তিনি যুক্তি, সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে শেষবারের মতো সাক্ষ্য দিয়েছিলেন।

তাঁর নীরব প্রতিক্রিয়া, মানুষের অনুচ্চারিত মুখ এবং সমাজের অচেতনতার মধ্যে ডুবে যাওয়া সেই দিনগুলো ইতিহাসে পরিণত হয়েছে এক গভীর প্রতীকে—যেখানে এক নারী, এক কন্যা, এক সাদিকা, এক তাহেরা, সমস্ত সত্যের ভার নিজের কণ্ঠে বহন করেছিলেন।

রিপোর্ট: হাসান রেজা 

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha